রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:বয়স জালিয়াতি করে অতিরিক্ত দুই বছর চাকরি করা সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সচীন কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়। তার পেনশন হতে দুই বছরের টাকা কর্তনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও তিনি জালিয়াতি করে অতিরিক্ত দুই বছর চাকরিতে বহাল ছিলেন। অর্থ্যাৎ গুরু পাপে লঘু শাস্তি পেয়েছেন তিনি।শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা প্রফেসর সচীন কুমার রায় (অধ্যাপক ইতহাস), অধ্যক্ষ সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ এর বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার অভিযোগ তদন্তে প্রমান হওয়ায় সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল ) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩(বি) ৩(ডি) মোতাবেক “অসধাচরণ” ও “দুর্নীতি” এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হলে তিনি ব্যক্তিগত শুনানীর আবেদন করেন। ২০১৮ সালের ৩ মে ব্যক্তিগত শুনানী গ্রহন করা হয়। শুনানীকালে তিনি যুক্তিসংগত কারণ তথ্য/উপাথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি’।
পরবর্তীতে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের মতামত চাওয়া হলে সেখান থেকে জানানো হয় সচীন কুমার রায়ের চাকরিতে আবেদনের সময় জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৮ ঘোষনা করায় বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস পার্ট-১ এর বিধি ৯ অনুযায়ী জন্ম তারিখ পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৬০ অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারী তিনি পিআর এল গমন করেছেন। সার্বিক বিবেচনায় প্রকৃত জন্ম তারিখ হিসেব করে অতিরিক্ত দুই বছরের বেতন ভাতাদি বাবদ গৃহীত সমুদয় অর্থ পেনশন হতে কর্তনপূর্বক বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সচীন কুমার রায় ৭ম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে যোগ দেন ১৯৮৭ সালে। যোগদানের সময় সকল কাগজপত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ সাল। এভাবে চলে আসছিল দীর্ঘদিন। হঠাৎ করে তার জন্ম তারিখ নিয়ে ঘটে তেলেসমাতি ঘটনা। অর্থাৎ তার বয়স ২ বছর কমে যায়। ২৭ বছর পর ২০১৪ সালে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার পর জন্ম তারিখ নিয়ে এই কেলেঙ্কারি ঘটনা ধরা পড়ে। পদোন্নতি পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, তার জন্ম তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ থেকে ২ বছর কমে হয়েছে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬০ সাল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বয়স আগেই কমানো হলেও মন্ত্রণালয় তা সংশোধন করেছে সম্প্রতি। গেল বছর অবসরে যাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব যার স্ত্রী সচীন কুমারের চাকরির ব্যাচমেট। সেই সূত্র ধরে তিনি যখন ভারপ্রাপ্ত সচিবের দায়িত্ব পান তখন তার ফাইলটি অনুমোদন করিয়ে দেন। এরপর থেকে এটি নিয়ে মন্ত্রণালয়, মাউশি এবং সৈয়দ হাতেম আলী কলেজে তোলপাড় শুরু হয়। সরকারি চাকরিতে এফিডেভিট (বয়স কমানোর দালিলিক প্রমাণ) গ্রহণযোগ্য নয়। এটা জেনে তিনি চাকরিতে যোগদানের পর বয়স কমিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি অতিরিক্ত আরো দুই বছর চাকরি করছেন।
এ ছাড়া তিনি যে প্রক্রিয়ায় বয়স কমিয়েছেন পুরোটাই সন্দেহজনক ছিল। প্রথমত এসএসসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত বোর্ড একজন শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ করে ১৪ থেকে ২০ বছর। এর মধ্যে কেউ যদি বয়স কমানোর আবেদন করে সেখানে সর্বোচ্চ ১ থেকে ১১ মাস পর্যন্ত কমানো হয়। এর বেশি হলে সকল কাগজপত্র থাকার পরও বাতিল বলে ধরে নেয়া হয়। দ্বিতীয়ত, ওই কর্মকর্তা এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক পাস করার পর বিসিএস পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেন এবং চাকরিতে যোগদান করেন। বয়স কমাতে এই দীর্ঘসময় লাগার কথা নয়। তাছাড়া চাকরিতে এফিডেভিট শর্ত জুড়ে দেয়া ছিল। তৃতীয়ত, তার বয়স কমার পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, হিসাব রক্ষক (এজি) অফিস তা গ্রহণ করতে হবে।
Leave a Reply